খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত : রয়টার্স; জীবিত কারও সন্ধান মেলেনি : রেড ক্রিসেন্ট

এবার ইউরোপের ১২ দেশে যুদ্ধবিরোধী ছাত্র বিক্ষোভ , গ্রেপ্তার ৩০০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপেও বড় আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভ দমনে বল প্রয়োগ করছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন করে বিক্ষোভরত প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ এবং ইসরায়েলের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনেরও অবসান চান শিক্ষার্থীরা। পরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

মার্কিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভ চলছে ইউরোপের অন্তত এক ডজন দেশে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ও আয়ারল্যান্ড।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এসব দেশ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। ইউরোপের বাইরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মেক্সিকো, লেবানন, ইরাকের মতো আরও বেশ কিছু দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তাঁবু গুঁড়িয়ে দিচ্ছে পুলিশ। শেষ মঙ্গলবার জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। দেশটিতে ইতিমধ্যে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে মরিয়া হলেও গাজায় আগ্রাসন বন্ধে ইসরায়েলকে কার্যকর চাপ না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান শিক্ষার্থী বিক্ষোভ নিয়ে শুক্রবার প্রথমবার কথা বলেন বাইডেন। সেদিন তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অবশ্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

ব্যাপক ধরপাকড়

ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী। গতকাল বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের তাঁবু গুড়িয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশ বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটাও করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে ১৬৯ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এদিন নেদারল্যান্ডসের ইউট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয় ও টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডেলফ্টেও বিক্ষোভ হয়েছে।

জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে গতকাল প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার হল দখলে নেন। এরপর সেখানে কিছু ব্যানার টানিয়ে দেন তাঁরা। এর মধ্যে একটি ব্যানারে লেখা ছিল ‘গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় দখল’। এরপর ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পুলিশ এসে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেয়।

বার্লিনের ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন দখলে নেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদের সরিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।

প্যারিসে স্বনামধন্য সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী একটি ভবন দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। সম্প্রতি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলমান বিক্ষোভে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সেখানকার ১৩ শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করেছেন।

সায়েন্সেস পোর অদূরে সোহবন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করতে গেলে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকে কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার পাশাপাশি ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, জুরিখ ও লুজান শহরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসব বিক্ষোভ থেকেও কিছু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষকেরাও

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দুই হাজার শিক্ষক।

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরুর পর বার্সেলোনা, মাদ্রিদ, ভ্যালেন্সিয়ার মতো দেশটির বড় বড় শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রথম বিক্ষোভে নামেন ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোথাও পুলিশের বাধার মুখে পড়েননি বিক্ষোভকারীরা। এর কারণ হিসেবে স্পেনের ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টির উল্লেখ করা হচ্ছে।

স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান এই বিক্ষোভ সমন্বয়ের কাজ করছে দ্য স্প্যানিশ ইন্টার-ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক অব সলিডারিটি উইথ প্যালেস্টাইন নামের একটি সংগঠন। মঙ্গলবার দেওয়া সংগঠনটির এক বিবৃতিতে স্পেনের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চলমান বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তাতে বলা হয়, কোনো যুক্তিতেই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞ মেনে নেওয়া যায় না।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!